বনানী প্রতিনিধিঃ রাজধানীর বনানী থানা এলাকায় পুলিশের সোর্স পরিচয়ে শহীদ নামে এক ব্যাক্তি বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। চাঁদা না পেলে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নানা কৌশলে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করে এই শহীদ। সাপ্তাহিক উৎকোচ সুবিধায় মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে তার গভীর সখ্যতা রয়েছে বলে অনেকে মৌখিক অভিযোগ করেন। মাঝে মধ্যে বনানী থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে তার বিচরণ লক্ষণীয়। পুলিশের তথ্যদাতা হয়ে তাদের সঙ্গে অবাধ ঘুরাফেরার ফলে অনেকেই তাকে সোর্স হিসেবে চেনে বলে এক চা দোকানী বলেন।
কড়াইল বস্তি এলাকায় বিভিন্ন ভ্রাম্যমান মাদক বিক্রেতাদের নিকট থেকে উৎকোচ গ্রহনের সময় প্রায় টুকিটাকি ঝুটঝামেলা হয়ে থাকে। গত ১৩-১-২০২১ইং সন্ধার সময় কড়াইল বস্তির কুমিল্লা পট্টি এলাকায় চাঁদা আনতে গিয়ে লাঞ্ছিত হতে হয়েছে তাকে। এভাবে বনানী এলাকা জুড়ে তার চাঁদা দৌরাত্ন্যের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কড়াইল বস্তিতে মাদক ব্যবসার মহাজন খ্যাত বনানী থানা পুলিশের সোর্স শহীদ। তিনি বনানী ১নং রোড সংলগ্ন গোডাউন বস্তিতে থাকেন। তাকে নিয়ে থানার পুলিশও বিব্রত অবস্থায় রয়েছে। বিভিন্ন সূএে জানা গেছে, বনানী থানার কিছু অসাধু পুলিশ তাদের স্বার্থে শহীদকে ব্যবহার করছে। তাই তার মাদক ব্যবসার বিষয়ে থানার সব পুলিশ অবগত থাকলেও তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। এছাড়া পুলিশরাই তাকে দিয়ে মাদক ব্যবসা করাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
২০০৫ সালে বনানী আমতলী ২নং রোডের হিন্দুপাড়া বস্তি থেকে অবৈধ পিস্তল, গুলি ও বিস্ফোরক দ্রব্যসহ শহীদকে গ্রেফতার করেছিল র্যাব-১। এই মামলায় সাজা খেটে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর থেকেই পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। বনানী-গুলশান থানা পুলিশের ব্যক্তিগত গাড়ির ড্রাইভার হিসেবেও কাজ করেছে শহীদ। পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে বনানী গোডাউন বস্তিতে বেশকিছু ঘরও দখল করে নিয়েছেন। তিনি পুলিশের সহযোগিতায় সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে মাদক ব্যবসা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার ঘরে প্রতিদিন মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত পুলিশের আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়। তারা এখানে মাদক সেবন ও অবৈধ চাঁদার টাকা ভাগ বাটোয়ারা করেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।
শহীদের বিভিন্ন ধরনের অপকর্মের বিরুদ্ধে গোডাউন বস্তির বাসিন্দারা ২০১৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর বনানী থানায় অভিযোগ করেছিলেন। একই দিনে ততকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে একটি চিঠি দেন স্থানীয় বাসিন্দা মোস্তফা কামাল। এ ছাড়া ওই চিঠির অনুলিপি ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয় ও বনানী থানায়ও পাঠানো হয়েছিল।
ওই অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, ‘মো. শহীদ, মো. হৃদয়, মো. ইয়াসিন ও মো. উজ্জল ১ নম্বর রোড, ২০ নম্বর ওয়ার্ডসহ বনানী এলাকায় চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক, নারী ব্যবসাসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িত। শহীদ সব সময় অবৈধ অস্ত্র নিয়ে চলাচল করে। কেউ এসব ব্যাপারে প্রতিবাদ করলে তাকে হেনস্তা করে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। অনেক আগে শহীদ অবৈধ অস্ত্র নিয়ে র্যাবের কাছে গ্রেফতার হয়। পরে জামিনে বের হওয়ার পর সে তার দল নিয়ে আবারও অপরাধ কর্মকাণ্ড করতে থাকে। শহীদ ও তার দলের বিরুদ্ধে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় একাধিক মামলা আছে। এগুলোর কোনো তোয়াক্কাই করে না সে। এভাবে চলতে থাকলে বনানী এলাকায় বড় ধরনের সংঘর্ষ বা খুন-খারাবির ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।’
মোস্তফা কামাল বলেন, অভিযোগের পরেও অদৃশ্য শক্তির কারনে এখনো পর্যন্ত শহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।